নিতান্তই ছোট গল্প


train-stationস্টেশনের বেঞ্চিতে বসে আছি। চারপাশে বিভিন্ন ধরনের মানুষের ঘোরাফেরা। কেউ বাদাম চিবোচ্ছে, কেউবা চা-কফি। আর যাদের ধুমপানের অভ্যেস আছে তারাও অন্যের সুবিধা-অসুবিধার তোয়াক্কা না করে সমানে ধোয়া ছেড়ে যাচ্ছে। স্টেশনে যে ওয়েটিং রুম নেই, তা অবশ্য নয়। কিন্তু সেগুলো ব্যবস্থাপনার অভাবে এতো পরিমাণ নোংরা যে, সেখানে বসার জো নেই। সে যাই হোক, আমরা স্টেশনের যে যায়গাটায় বসে আছি তার পাশেই ওভারব্রিজ। যেটি এক প্লাটফরম থেকে অন্য প্লাটফরমে যাবার জন্য ব্যবহৃত হবার কথা। কিন্তু অধিকাংশ যাত্রীই সময় বাঁচানোর জন্য ওভারব্রিজের কথা ভুলে যায়। প্লাটফরমের গোড়াতেই চা-কফি আর মোবাইল রিচার্জের দোকান। আজকাল মোবাইল রিচাজের্র দোকান খোলার জন্য কোন নিদির্ষ্ট জায়গার প্রয়োজন হয়না। মানুষের আনাগোনা আছে এমন একটা জায়গা দেখে চেয়ার টেবিল নিয়ে বসে গেলেই হয়ে গেল, ব্যস। অবশ্য এতে কিছু মানুষের কর্মসংস্থানেরও যে ব্যবস্থা হচ্ছে তা অবশ্য বলার অপেক্ষা রাখেনা।

আসল কথায় ফেরা যাক, বড় ভাই আর ভাবীকে বিদায় দেয়ার জন্যই স্টেশনে আসা। ওরা কিছুদিনের জন্য আমার এখানে বেড়াতে এসেছিলো। ট্রেন আসতে এখনো কিছুটা দেরী আছে। সময়টা কাজে লাগানোর জন্য আমরা আড্ডায় মেতে উঠেছি। ভাগ্যিস টিকেটটা আগে থেকেই কনফার্ম করা ছিলো, নাহলে আড্ডাটা আর জমতো না। মানুষের কোলাহল উপেক্ষা করে গল্পে মেতে উঠলাম। মশাগুলিও অবশ্য থেমে তাদের রুটিন ওয়ার্ক থেকে। এরই মধ্যে আমরা চায়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম। আমি পাশের চায়ের দোকানে তিনটা চায়ের অর্ডার দিলাম। যথা সময়ে চা চলে এলো। চা’এ একটা চুমুক দিয়েই মুখটা পানশে হয়ে গেল। লিকার তো হয়ইনি, চিনিও কম। আসলে জিনিসটাকে চা বলেই মনে হলোনা। চাওয়ালাকে কিছুটা চিনি মিশিয়ে দিতে বলা হলো, তারপরও চায়ের ফ্লেভারটা ফিরে এলোনা। ভাবী শেষ পর্যন্ত বিরক্ত হয়ে চা’টা ফেলেই দিলো। আমরা মুখটা পানশে করে আরো কয়েকটা চুমুক দিলাম। এমন সময় আমাদের উল্টোদিকের বেঞ্চিতে একজনের মুখ খুবই পরিচিতো মনে হলো। কিন্তু ঠিক চিনে উঠতে পারছিলাম না। চা’টা আর শেষ করতে পারলাম না। কেমন যেন অস্বস্তি কাজ করতে লাগলো। কাপগুলো ফিরিয়ে দামটা দিয়ে আবারো এসে বসলাম। আর সেই মানুষটির সাথে পরিচিত মুখগুলো মেলাতে শুরু করলাম। একটা চেহারার কথা মনে পড়ছিলো, কিন্তু ঠিক সিওর হতে পারছিলাম না। শেষ পর্যন্ত দিধা ঝেড়ে বলেই ফেললাম-

-আপনি সাগর না?

-হ্যাঁ, কিন্তু আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না।

-আরে আমি ইমন। স্কুল জীবনে কিছুদিনের জন্য সহপাঠী ছিলাম। আমি তোমাদের স্কুলে ক্লাশ সেভেনে ভর্তি হয়েছিলাম, আর তুমি কিছুদিন পর অন্য কোথাও চলে গিয়েছিলে। তারপর আর দেখা হয়নি।

-ও হ্যাঁ, এবার মনে পড়েছে। তা কেমন আছ, কি করছো এখন?

-পড়াশোনা শেষে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে আছি। ভালই আছি বলতে পারো।

-তারপর, তোমার খবর বলো।

-আমিও একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে মার্কেটিং’এ আছি। তা কোথায় যাচ্ছ?

-আরে আমি কোথাও যাচ্ছি না। ভাই-ভাবীকে বিদায় দেয়ার জন্য এসেছি। চলো আলাপ করিয়ে দেই।

ওদের পরিচয় করিয়ে দিলাম। কিছুক্ষন গল্প হলো। আরও কিছুক্ষন পর ট্রেন এলো। ওদের ট্রেনে তুলে দিলাম। সিটটাও একটু দেখে নিলাম। হুইসেল দিয়ে ট্রেনটি যাত্রা শুরু করলো। আমি পেছন থেকে রেল লাইনের দিকে চেয়ে রইলাম ট্রেনটি দিগন্তে মিলিয়ে যাওয়া পর্যন্ত। ওরা চলে গেল। সবাই চলে যাই, যেতে হয়, জীবনের প্রয়োজনে।

,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *