বিগত বছরগুলোয় যখন ইন্টারনেট এতটা প্রসার লাভ করেনি, সে সময় সামাজিক যোগাযোগ বলতে বোঝানো হতো বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানে সরাসরি সাক্ষাৎ করাকে। সে সময় মানুষ বিভিন্ন গোষ্ঠী ও পেশার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করত, একই সঙ্গে নতুন কারও সঙ্গে পরিচিত হওয়ার মাধ্যম হিসেবেও এ অনুষ্ঠানগুলো ব্যবহূত হতো। কিন্তু ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার যে গতিতে প্রসার লাভ করছে, তার থেকে খুব সহজেই বোঝা যায়, ভবিষ্যতে ইন্টারনেটই হবে যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। এমন একটি পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করা যেতে পারে, যেখানে বাস, ট্রেন, প্লেনে ভ্রমণের সময় ওই নির্দিষ্ট এলাকার অন্য মানুষের প্রোফাইল, তাদের শেয়ার করা বিভিন্ন ধরনের তথ্য জানতে পারা যাবে। এমনকি তাদের সঙ্গে যোগাযোগেরও সুযোগ থাকতে পারে। আবার এ সেবাটি হয়তো খুব শিগগির চালু হবে, যখন কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় আইফোন বা অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিংসিস্টেম চালিত সব স্মার্টফোন একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে এবং অন্য ব্যবহারকারীরা যদি তার অপরিচিতও হয়, তার পরও হয়তো প্রোফাইলের বিভিন্ন অংশ দেখতে পারবে।
বর্তমানে দৈনন্দিন যোগাযোগের একটি বড় অংশ বহনযোগ্য যন্ত্রভিত্তিক হয়ে পড়ছে। মোবাইল যন্ত্রভিত্তিক বিভিন্ন প্রোগ্রামগুলোর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। পেশাদারির ক্ষেত্রে এ ব্যবহার আরও ব্যাপকভাবে দেখতে পাওয়া যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, টাকা লেনদেন বা বিভিন্ন কিছু কেনা-বেচার ক্ষেত্রে ব্যাংকে যাওয়ার প্রবণতা কমতে শুরু করেছে। অনলাইনে টাকা আদান-প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি এর অন্যতম প্রধান কারণ। এমনকি ব্যক্তিগত পর্যায়েও ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বেড়েছে। অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে যাওয়ার তুলনায় এটিএম বুথগুলো বেশি ব্যবহূত হয়।
পেশাদারি ক্ষেত্রে নলেজ শেয়ার বেশ জনপ্রিয় একটি বিষয়। একই ধরনের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে এমন মানুষ পরস্পরের সঙ্গে কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন বিষয় শেয়ার করে থাকে। লিংকড-ইন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইটটি মূলত পেশাদারদের জন্য উপযোগী করেই তৈরি করা হয়েছে। এখানে কাজের ক্ষেত্র অনুযায়ী অন্য ব্যবহারকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় এবং দেখা যাচ্ছে যে নিয়মিতভাবেই এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানে নতুন লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোর ব্যবহার বাড়ছে। কারণ, সাধারণভাবে এ সাইটগুলোয় ব্যবহারকারীরা তার নিয়মিত কার্যক্রম, দক্ষতাসম্পর্কিত তথ্যগুলো প্রকাশ করে থাকে। এর ফলে সহজেই নির্দিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া যায় এবং দেখা গেছে, বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ২৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এমনকি বিজ্ঞাপন প্রকাশের জন্য একটি কার্যকর স্থান হলো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলো। বেজাস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতের প্রায় ৮৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান স্বীকার করেছে, সোশ্যাল মিডিয়ার উপস্থিতি ছাড়া কোনো বিজ্ঞাপনই পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর করা সম্ভব নয়। বর্তমানে প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই এ ধরনের সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে নিজেদের উপস্থিতি বাড়াচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি, তাদের কার্যক্রম এবং সামগ্রিকভাবে বিজ্ঞাপনের কাজে ব্যবহার করার জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকর একটি ব্যবস্থা।
অনেক প্রযুক্তিবিদই বলছেন যে ২০১৪ সালের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলো দৈনন্দিন ব্যবহূত ই-মেইলের বিকল্প হিসেবে ব্যবহূত হবে। বর্তমান সময় পর্যন্ত ই-মেইলই প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। মূলত দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেই এই বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সবাই পরিচিত এবং এর ফলে এটি ব্যবহারও অনেকাংশে সহজ বলে মনে হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নতুন নতুন মোবাইল ডিভাইস এবং বিভিন্ন অ্যাপলিকেশনগুলোও সামাজিক যোগাযোগের এ বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপন করছে। ব্যবহারকারীরা একই সঙ্গে একাধিক সামাজিক যোগাযোগের সাইটের সঙ্গে যুক্ত থাকছে এবং একই সঙ্গে ডেস্কটপ ও মোবাইল ডিভাইসগুলোতেও এ ধরনের অ্যাপলিকেশনের ব্যবহার বাড়ছে।
পেশাদারির ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ
